ঢাকা , বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিয়ের চাপ দেওয়ায় কীটনাশক খাইয়ে মা-মেয়েকে হত্যা!

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৮-১২-২০২৪ ০৩:৪৫:৩৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৮-১২-২০২৪ ০৬:৪৫:১৫ অপরাহ্ন
বিয়ের চাপ দেওয়ায় কীটনাশক খাইয়ে মা-মেয়েকে হত্যা! সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে অচেতন অবস্থায় মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর মৃত্যুর ঘটনায় আসল রহস্য বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় জড়িত বিধান দাস (২৫) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মূলত অসম প্রেমের বলি হয়েছেন পিংকু মজুমদারের স্ত্রী মাধুরী বিশ্বাস (৩৬) ও তার সাত বছরের কন্যাসন্তান শ্রেষ্ঠা। বিধান দাসকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মাধুরী ও বিধানের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে গড়ে ওঠার পর তাকে বিয়ের চাপ দেওয়া হলে তিনি এমন হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লালবাগ বিভাগের ডিসি জসিম উদ্দিন।

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বন্ধুর দেওয়া মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে খুলনার তেরখাদা থানার পিংকু মজুমদারের স্ত্রী মাধুরী বিশ্বাসের সাথে অসম পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়ান পটুয়াখালীর বিধান দাস নামের এক যুবক। ৪-৫ মাস প্রেমের পর বিয়ের দাবিতে সাত বছরের কন্যাসন্তান শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে খুলনা থেকে পটুয়াখালীতে বিধানের কাছে চলে যান মাধুরী। সেখান থেকে মা-মেয়েকে লঞ্চযোগে ঢাকায় আনার সময় সুকৌশলে পানির সঙ্গে ঘাস মারার কীটনাশক খাইয়ে তাদের হত্যা করেন বিধান। এই হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন পর মঙ্গলবার মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে বিধান দাসকে গ্রেফতার করে ডিএমপির কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় ৬ ডিসেম্বর নিহতের বড় ভাই নারায়ণ বিশ্বাস রাজধানীর কোতোয়ালী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। সেই মামলায় পুলিশ বিধান দাসকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে। তাকে গ্রেফতারের পর নেপথ্যের ঘটনা বেরিয়ে আসে।

লালবাগের ডিসি জসীম উদ্দিন বলেন, পটুয়াখালী জেলার দশমিনার বিধান দাস বাল্কহেডের ইঞ্জিন শ্রমিক। ৪-৫ মাস আগে তার এক বন্ধুর কাছে তিনি মাধুরীর মোবাইল নম্বর পান এবং তাকে কল করেন। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে এবং সম্পর্ক পরকীয়ায় রূপ নেয়। মাধুরী বিধানকে বিয়ের জন্য চাপ দেন, কিন্তু তিনি রাজি হন না। গত ২৮ নভেম্বর মাধুরী তার মেয়ে শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে খুলনা থেকে বাসযোগে বরিশাল যান এবং বিধানের সাথে বরিশালের স্থানীয় এক আবাসিক হোটেলে ওঠেন। সারারাত একসঙ্গে থাকার পর পরদিন সকালে বিধান তার পারিবারিক কাজ নিয়ে ব্যস্ততার কথা বলে পটুয়াখালী চলে যান এবং মাধুরীকে বলেন, তিনি যেন পটুয়াখালী চলে আসেন। সেখান থেকে তারা একসাথে ঢাকা যাবেন। এরপর থেকে বিধান পরিকল্পনা সাজাতে থাকেন কীভাবে মাধুরীকে তার জীবন থেকে সরানো যায়।

ডিসি বলেন, গত ৪ ডিসেম্বর সকালে দশমিনা বাজারের নলখোলা বন্দরের একটি দোকান থেকে ঘাস মারার কীটনাশক কিনেন। ওইদিন বিকেলে বিধান, মাধুরী ও তার শিশু কন্যা শ্রেষ্ঠাসহ লঞ্চযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করেন। লঞ্চ ছাড়ার পর খাওয়া-দাওয়া শেষে শ্রেষ্ঠা ঘুমিয়ে পড়লে বিধান ও মাধুরীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয় এবং বিধান মাধুরীকে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বলে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক বিষ মেশানো পানি পান করতে দেন এবং তিনি সেটা পান করেন। পরে শ্রেষ্ঠা ঘুম থেকে উঠলে একই কীটনাশক তাকে খাওয়ানো হয়।

পরদিন ৫ ডিসেম্বর সকালে লঞ্চটি সদরঘাট টার্মিনালে পৌঁছালে বিধান মাধুরী ও শ্রেষ্ঠাকে এক জায়গায় বসিয়ে খাবার আনার কথা বলে পালিয়ে যান। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা-মেয়ে দুজনেরই মৃত্যু হয়।

বাংলাস্কুপ /ডেস্ক/ এনআইএন/


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ